কোন্ দেশেতে তরুলতা
সকল দেশের চাইতে শ্যামল?
কোন্ দেশেতে চলতে গেলেই
দলতে হয় রে দুর্বা কোমল?
কোথায় ফলে সোনার ফসল,
সোনার কমল ফোটেরে?
সে আমাদের বাংলাদেশ,
আমাদেরই বাংলা রে
—-কোন্ দেশে
(সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত)
রবীন্দ্রনাথ যার কাব্য ছন্দে বিস্মিত হয়ে তাঁকে ছন্দের যাদুকর আখ্যায় ভূষিত করেছেন।
মেথরদের মতো অস্পৃশ্য ও অবহেলিত সাধারণ মানুষ নিয়েও যিনি কবিতা লিখেছেন। যিনি প্রয়োজনীয়তার উপর ভিত্তি করে একাধিক ছদ্মনামে কবিতা চর্চা করতেন।
বলছিলাম বাংলা সাহিত্যকে ছন্দের মাধ্যমে যিনি একটি অনন্য উচ্চতায় আসীন করেছেন সকলের প্রিয় কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের কথা।
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত পরিচিত প্রকৃতিপ্রেমিক কবি হিসেবে। তিনি ছন্দের জাদুকর হিসেবেও পরিচিত।
কবি জন্মগ্রহণ করেছিলেন কলকাতায় আঠারোশো বিরাশী সালের এগারই ফেব্রুয়ারী।
উনিশশো খৃষ্টাব্দে সুরেশচন্দ্র সমাজপতির ‘সাহিত্য’ পত্রিকাকে কেন্দ্র করে বাংলা কাব্য সাহিত্যে তার আবির্ভাব। তিনি ছিলেন ভারতী পত্রিকাগোষ্ঠীর অন্যতম কবি। প্রথম জীবনে তিনি মাইকেল মধুসূদন দত্ত,অক্ষয়কুমার বড়াল প্রমুখের দ্বারা প্রভাবিত হন। পরে রবীন্দ্র অনুসারী হলেও তিনি স্বতন্ত্র হয়ে ওঠেন।
বাংলা শব্দের সঙ্গে আরবি ফারসি শব্দের সমন্বিত ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলা কাব্যভাষার শক্তি বৃদ্ধির প্রাথমিক কৃতিত্ব তাঁরই।
সাহিত্য ভারতী, প্রবাসী প্রভৃতি সে কালের বিখ্যাত পত্রিকা গুলিতে তাঁর রচনা প্রকাশিত হত। ক্রমে বাংলা সাহিত্যের বৃহত্তর পাঠক মহলে তিনি কবি হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। তাঁর কবি বৈশিষ্ট্যের মধ্যে আমরা খুঁজে পাই ইতিহাসের প্রতি দায়বদ্ধতা, সৌন্দর্য রসিক, প্রেমিক কবি,গীতি কবির আবেগ,বস্তুগ্রাহ্যতা,মানব প্রেম এবং স্বদেশ প্রেম।
তাঁর কবিতায় ছন্দের কারুকাজ, শব্দ ও ভাষা যথোপযুক্ত ব্যবহারের কৃতিত্বের জন্য তাঁকে ছন্দের জাদুকর নামে আখ্যায়িত করা হয়। মধ্যযুগে ভারতের ইতিহাস, সংস্কৃতি, পৌরাণিক প্রভৃতি বুদ্ধিবৃত্তি বিষয়ক বিভিন্ন বিষয়ে তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্তের অধিকারী।
উনিশশো বাইশ সালের আজকের এই দিনটিতে অর্থাৎ পঁচিশে জুন মাত্র চল্লিশ বছর বয়সে কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত পরলোকগমন করেন।
এত কম বয়সে এই আশ্চর্য প্রতিভার অধিকারী কবির মৃত্যু বাঙালি সাহিত্যে যে অপূরণীয় ক্ষতি করে গিয়েছে তা সাহিত্যানুরাগী মাত্রই স্বীকার করে থাকেন।
আজ তার মৃত্যুবার্ষিকীতে লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠন এর সকল সদস্য দায়িত্বশীল এবং শুভাকাঙ্ক্ষীবৃন্দের পক্ষ থেকে জানাচ্ছি বিনম্র শ্রদ্ধা এবং অজস্র ভালোবাসা।
তাংঃ- ২৫/৬/২০২১ ইং