কইলজার ভিতর গাঁথি রাইখ্যম তোয়ারে, যদি সুন্দর একখান মুখ পাইতাম সহ আরও অসংখ্য বিখ্যাত গানের শিল্পী ছিলেন তিনি।
বলছি এম এন আখতারের কথা যিনি বাংলাদেশের চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের জনপ্রিয় গীতিকার সুরকার ও শিল্পী।
এম এন আখতার উনিশশো বত্রিশ সালের পহেলা জুলাই চট্টগ্রামের রাউজানের মোহাম্মদপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
এম এন আখতার উনিশশো বাষট্টি সালে বেতার শিল্পী হিসাবে যোগ দেন।
এরপর তিনি আধুনিক পল্লীগীতি মুর্শীদি মারফতি চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গান রচনা ও কণ্ঠ দিয়ে খ্যাতি লাভ করেন।
উনিশশো সপ্তাশী সালে তিনি অবসর নেন। তিনি সংগীত বিষয়ক কয়েকটি গ্রন্থ লিখেছেন। এর মধ্যে মনুআ-১, মনুআ-২ এবং ৩০ দিনে অভিনব সঙ্গীত শিক্ষা উল্লেখযোগ্য।
লেখা ও সুর করার পাশাপাশি এম এন আখতার নিজেও গাইতেন। তিনি উনিশশো বাষট্টি সালে কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রের উদ্বোধনী আধুনিক গানের প্রথম শিল্পী।
আঞ্চলিক গানের সম্রাজ্ঞী বলে পরিচিত শিল্পী শেফালী ঘোষের ওস্তাদ ছিলেন তিনি। তার লেখা ও সুর করা গান গেয়ে শ্যামসুন্দর বৈষ্ণব ও শেফালী ঘোষ খ্যাতি পান।
তার অনেক গান চলচ্চিত্রেও নেওয়া হয়েছে। পঁয়ত্রিশ বছর আগে গ্রামোফোন রেকর্ডে শিল্পী আখতার ও সাবিনা ইয়াসমিন গেয়েছিলেন ‘কইলজার ভিতর গাঁথি রাইখ্যম তোয়ারে’ গানটি।
পরে এই গানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। তিনি প্রায় পাঁচ হাজারেরও অধিক গান লিখেছেন। পাশাপাশি লিখেছেন অসংখ্য নাটক ও কবিতা।
তার লেখা গানের মধ্য থেকে কয়েক হাজার গান নিয়ে ‘এম এন আখতারের গান’ নামে একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।
শুধু আঞ্চলিক গানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেননি তিনি। একুশের গান দেশাত্ববোধক গান আধুনিক গান পল্লীগীতি ভাবের গান বিচ্ছেদি গান হামদ-নাত পীর-আউলিয়ার গান এবং চট্টগ্রামের হাওলা গানেও তার পদচারণা ছিল।
ষাটের দশক থেকে তিনি পূর্ণাঙ্গ আঞ্চলিক ভাষায় আটটি ও শুদ্ধ ভাষায় চারটি গীতিনাট্য রচনা করেন।
এম এন আখতারের রচিত অনেক গানের মধ্যে একটি সাড়া জাগানো গান ছিল ‘বকশি হাইট্টা পানের খিলি তারে বানাই খাবাইতাম’।
তার রচিত উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে রয়েছে কইলজার ভিতর গাঁথি রাইখ্যম তোয়ারে, যদি সুন্দর একখান মুখ পাইতাম, তুমি যে আমার জীবনের উপহার , ও পরানর তালত ভাই চিডি দিলাম, বাচুরে- জী জী জী, বর্গী এলো দেশে, মধুমিতা ইত্যাদি।
চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় চুড়িওয়ালা, সোনার কলসী, নাতিন জামাই, কানের ফুল, লট্টন কইতর, রাঙ্গাবালির চরে, বৈশাখী মেলাসহ অনেক নাটক লিখেছেন।
তার সর্বশেষ রচিত হাসির নাটক ‘রসিক দাদুর স্কুলে মানুষ গড়ার কল’।
দুইহাজার বারো সালের আজকের এই দিনটিতে অর্থাৎ আঠারোই এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
আজ তার মৃত্যুবার্ষিকীতে লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠনের সকল সদস্য দায়িত্বশীল এবং শুভাকাঙ্ক্ষীবৃন্দের পক্ষ থেকে জানাচ্ছি বিনম্র শ্রদ্ধা এবং অজস্র ভালোবাসা।
তাংঃ- ১৮/০৪/২০২১ ইং