কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ উনিশশো চৌত্রিশ সালের আটই ফেব্রুয়ারি বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। কিশোর বয়স থেকেই তাঁর কবিতা লেখা শুরু।
তাঁর কবিত্বশক্তি লক্ষ্য করে স্তম্ভিত হয়েছেন সমসাময়িক কবিরা। ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণেই বাংলা কবিতায় তার স্পর্ধিত আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল ‘মাগো, ওরা বলে’ কবিতায়।
আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর ‘আমি কিংবদন্তীর কথা বলছি’ পড়ে এদেশের প্রধান কবি শামসুর রাহমান নিঃসংকোচে বলেছিলেন, ‘তিনি যদি আর কোন কবিতা নাও লিখেন তবুও তিনি অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবেন একজন শক্তিশালী কবি হিসেবে’।
আর পশ্চিম বাংলার অন্যতম প্রধান কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য ছিল, ‘এমন কবিতা বাংলা ভাষায় লেখা সম্ভব সেটা আমার জানা ছিল না।’
আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ পঞ্চাশ দশকের অন্যতম কবি হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। তাঁর কবিতায় আবহমান বাংলার অকৃত্রিম ছবি পাওয়া যায়। তাঁর কবিতার সূচনা ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে এবং বিকাশ ঘটে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন এবং স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশের সামগ্রিক জনজীবনের আশা-নিরাশা এবং স্বপ্ন-বাস্তবতাকে কেন্দ্র করে।
ইংরেজি সাহিত্যের একজন মেধাবী ছাত্র আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ এমএ পরীক্ষার ফল প্রকাশের আগেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। টেকনোক্রেট মন্ত্রী হিসেবে এদেশের কৃষি ব্যবস্থাপনার অবকাঠামো গড়ে তোলেন তিনি।
কাব্যের আঙ্গিক গঠনে এবং শব্দ যোজনার বিশিষ্ট কৌশল তাঁর স্বাতন্ত্র্য চিহ্নিত করে। তিনি লোকজ ঐতিহ্যের ব্যবহার করে ছড়ার আঙ্গিকে কবিতা লিখেছেন। প্রকৃতির রূপ ও রঙের বিচিত্রিত ছবিগুলো তাঁর কবিতাকে মাধুর্যমণ্ডিত করেছে।
আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ তাঁর কাব্যরীতিতে মূলত দুটি প্রবণতাকে অনুসরণ করেছেন: একটি তাঁর প্রথম জীবনের প্রিয় গীতিমুখ্য কাব্যরীতি আর অন্যটি মহাকাব্যিক।
পঞ্চাশের দশকে রচিত তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ “সাত নরী হার” এবং পরবর্তীকালের “কখনো রং কখনো সুর” ও “কমলের চোখ” এ ধরনের গীতিমুখ্য সুললিত কবিতার সংকলন।
আশির দশক থেকে আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ মহাকাব্যিক কাব্যরীতিতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন। এ পর্যায়ে তাঁর কবিতার বিষয় হিসেবে উঠে আসা মা-মাটি ও সংগ্রামী মানুষের চিত্র পরিচিত দেশ-কালের সীমানা অতিক্রম করে স্পর্শ করে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডল।
এ মহাকাব্যিক কাব্যভঙ্গিতেই তিনি রচনা করেন তাঁর সর্বাধিক জননন্দিত কাব্যগ্রন্থ “আমি কিংবদন্তীর কথা বলছি”। এ ছাড়া “সহিষ্ণু প্রতীক্ষা” এবং “বৃষ্টি ও সাহসী পুরুষের জন্য প্রার্থনা” কাব্যগ্রন্থ দুটিতেও মহাকাব্যিক ব্যঞ্জনা লক্ষ্য করা যায়।
এছাড়াও তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ সাতনরী হার, কখনো রং কখনো সুর, কমলের চোখ, প্রেমের কবিতা, আমার সময়, নির্বাচিত কবিতা, আমার সকল কথা, মসৃণ কৃষ্ণ গোলাপ, খাঁচার ভিতর অচিন পাখি এবং জীবিত অবস্থার সর্বশেষ কাব্যগ্রন্থ মসৃণ কৃষ্ণগোলাপ প্রভৃতি।
সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক ও অন্যান্য অনেক পুরস্কার লাভ করেন।
দুহাজার এক সালের আজকের এই দিনটিতে অর্থাৎ ১৯ মার্চ এই যশস্বী কবির মৃত্যুবরণ করেন।
লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠন এর সকল সদস্য দায়িত্বশীল এবং শুভাকাঙ্ক্ষীবৃন্দের পক্ষ থেকে কবির মৃত্যুবার্ষিকীতে জানাচ্ছি বিনম্র শ্রদ্ধা এবং অজস্র ভালোবাসা।
তারিখ:- ১৯/৩/২০২১ ইংরেজি