আধুনিক ভারতীয় চিত্রশিল্প প্রবর্তকদের অন্যতম নন্দলাল বসুর মৃত্যুবার্ষিকী আজ

আধুনিক ভারতীয় চিত্রশিল্প প্রবর্তকদের অন্যতম হলেন নন্দলাল বসু।

তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন আঠারোশ তিরাশি সালের তেসরা ফেব্রুয়ারী পূর্ববিহারের হাভেলি খড়গপুরে। তবে তাঁর পৈতৃক নিবাস হুগলি জেলায়। 

বাল্যকাল থেকেই তিনি চিত্রকলা এবং ভাস্কর্য শিল্পের প্রতি আগ্রহী ছিলেন। এ আগ্রহ থেকেই তিনি কলকাতার একটি চারুকলা বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এ বিদ্যালয়ে তিনি অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরএর একজন শিষ্য হয়ে ওঠেন। 

নন্দলাল বসু অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সবচেয়ে নিবেদিত অনুসারী হিসেবে পরিগণিত হন। এমন কি শিক্ষানবিশ থাকা অবস্থায় নন্দলাল একজন চিত্রশিল্পী হিসেবে সুনাম অর্জন করেন। 

তাঁর জগাই-মাধাই এবং সতীর মতো কিছু চিত্রশিল্প সারা ভারতে জনপ্রিয়তা লাভ করে।

চারুকলা বিদ্যালয় থেকে জোড়াসাঁকোতে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অধীনে পাস করার পর তিনি দি ইন্ডিয়ান সোসাইটি অব ওরিয়েন্টাল আর্ট স্কুলে যোগদান করে সেখানে তিন বছর কাজ করেন।

উনিশশো আট সালে তিনি তাঁর শিব-সতী চিত্রশিল্পের জন্য পাঁচশত টাকা পুরস্কার লাভ করেন।

এই টাকায় তিনি ভারতীয় সভ্যতার শৈল্পিক কীর্তিসমূহ স্বচক্ষে দেখার জন্য বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শন করেন। এ রকম ভ্রমণ নন্দলালের শৈল্পিক দৃষ্টিভঙ্গির ওপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। এই প্রভাব তাঁর শিল্পসাধনায় গুরুত্বপূর্ণ ও মৌল পরিবর্তন এনে দেয়।

উনিশশো চৌদ্দ সালে নন্দলাল শান্তিনিকেতনের কলাভবন পরিদর্শনে যান এবং সেখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর প্রত্যক্ষ সংস্পর্শে আসেন।

উনিশো ষোল সালে রবীন্দ্রনাথ জোড়াসাঁকোতে বিচিত্রা প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে স্বল্প সময়ের জন্য অবস্থান করে নন্দলাল। পরে উনিশশো বিশ সাল থেকে শান্তিনিকেতনে বসবাস শুরু করেন এবং উনিশশো বাইশ সালে কলাভবনের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।

নন্দলাল আধুনিক ভারতের প্রাচীরচিত্র পুনরুজ্জীবনে নেতৃত্ব দেন এবং নিজেও কিছু স্থানে প্রাচীরচিত্র অঙ্কন করেন। তিনি ছিলেন একজন বড় অনুপ্রেরণাদায়ক শিক্ষক। ভারতের সমকালীন শিল্প জগতে তিনি সর্বজনগ্রাহ্য মাস্টারমশাই নামে খ্যাতি লাভ করেন। নন্দলালের কোনো কোনো ছাত্র, যেমন, বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়, রাম কিংকর বেইজ জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে বিখ্যাত শিল্পী হিসেবে খ্যাতিলাভ করেছিলেন।

একজন চিত্রশিল্পী ও প্রাচীরচিত্র শিল্পী হিসেবে নন্দলাল বসু আধুনিক ভারতের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় ছিলেন। তাঁর শিল্পকর্মকে বিশুদ্ধ ঐতিহ্য থেকে স্বাধীন ও আধুনিক ভারতের পরিবর্তনের ধারায় উত্তরণের উদাহরণ হিসেবে বিবেচনা করা যায়। তাঁর রৈখিক ও অলংকারশোভিত শিল্পশৈলী তাঁর নিজের ব্যক্তিত্বে বৈশিষ্ট্যমন্ডিত।

নন্দলাল বসু ভারতের শাসনতন্ত্রের প্রথম সংস্করণের সচিত্র অলঙ্করণ করেন। তাঁকে ভারত সরকারের নকশা তৈরি করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি ভারতরত্ন, পদ্মভূষণ, পদ্মশ্রী সহ বিভিন্ন পুরস্কার লাভ করেন। উনিশশো পঞ্চাশ সালে কাশী বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানিক ডিলিট. ডিগ্রি প্রদান করে। উনিশশো ছাপান্ন সালে তিনি নয়া দিল্লীর ললিতকলা আকাদেমির ফেলো নির্বাচিত হন। উননিশো একান্ন সালে তিনি কলাভবন থেকে অবসর গ্রহণ করেন এবং তাকে প্রফেসর ইমেরিটাস পদ প্রদান করা হয়।

এরপর উনিশশো বায়ান্ন সালে বিশ্বভারতী তাকে দেশিকোত্তম উপাধি পাশাপাশি উনিশশো চুয়ান্নো সালে পদ্মভূষণ উপাধি প্রদান করা হয়।

উনিশশো ছিষষ্টি সালের আজকের এই দিনটিতে অর্থাৎ ষোলই এপ্রিল তার মৃত্যু হয়।

আজ গুণী এই মানুষের মৃত্যুবার্ষিকী।লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠন এর সকল স্তরের সদস্য দায়িত্বশীল এবং শুভাকাঙ্ক্ষীবৃন্দের পক্ষ থেকে তার মৃত্যুবার্ষিকীতে জানাচ্ছি অজস্র ভালোবাসা এবং বিনম্র শ্রদ্ধা।

তারিখঃ- ১৬/৪/২০২১ ইং। 

Facebook Comments