আমার এ ঘর ভাঙিয়াছে যেবা আমি বাঁধি তার ঘর,
আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর।
যে মোরে করিল পথের বিবাগী-
পথে পথে আমি ফিরি তার লাগি,
দিঘল রজনী তার তরে জাগি ঘুম যে হরেছে মোর;
আমার এ ঘর ভাঙিয়াছে যেবা আমি বাঁধি তার ঘর।
(কবিতাঃ- প্রতিদান)
ছন্দে ও ভাষাভঙ্গিতে আছে প্রাচীনের অনুসরণ, কিন্তু প্রতিমা রচনায় এবং নাটকীয় আবহ সৃষ্টিতে আছে এক বর্তমান কবির অনুভব। তিনি আধুনিক কালের পল্লী কবি নন বরং তিনি পল্লী কাব্যধারার আধুনিক কবি।
আমরা যদি আধুনিকতা বলতে, সময়ের সঙ্গে মিশে যাওয়া, প্রাসঙ্গিক থাকা, কল্যাণকর কিংবা মানবিক হওয়া কে বুঝে থাকি তবে নিঃসন্দেহে কবি জসীমউদ্দিন ছিলেন একজন আদর্শ আধুনিক কবি।
গ্রামীণ জীবন তাঁকে ভীষণভাবে নাড়া দিতো- এ কথা সত্য। কিন্তু বিশ্বগ্রামের এই যুগে যদি জসীম উদদীনকে শুধুমাত্রই ‘পল্লীকবি’ হিসেবে প্রচার করে থাকি তবে তা হবে সাহিত্যচিন্তার চরম সংকীর্ণতা।
তিনি গ্রামের সহজ-সরল মানুষের প্রাত্যহিক ভাবনাকে আধুনিক মনে অমায়িক দরদ দিয়ে বর্ণনা করেছেন।
শিল্পের ভেতর দিয়ে নিঃস্ব-নিপীড়িত-রিক্ত-ভাগ্যহীন গ্রামীণ মানুষের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ ও সহমর্মিতা পোষণই ছিলো তাঁর প্রতিজ্ঞা।মনে হয় যেন কবি হতে চেয়েছেন গ্রামীণ মানুষের অলিখিত জীবনের রূপকার।
বাংলার মা-মাটির সন্তান জসীম উদদীন। লোক ঐতিহ্যের রূপায়নে কবি পরম নিপুণভাবে তাঁর ছোঁয়া দিয়ে গেছেন। এ কথা নিরদ্বিধায় বলা যায় কবি গোটা বিশ্বসাহিত্যের এক অমূল্য রত্ন। চির-আধুনিক কবি জসীম উদদীন কিংবা বাঙালি জীবনের রূপকার জসীম উদদীনকে নিয়ে আরও সুগভীর আলোচনা হওয়া অত্যাবশ্যকীয় এখন সময়ের প্রয়োজনেই।
আজ কবির মৃত্যুবার্ষিকী।। তিনি উনিশশো ছিয়াত্তর সালের আজকের এই দিনে অর্থাৎ তেরই মার্চ ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর শেষ ইচ্ছা অনুসারে তাঁকে ফরিদপুর জেলার আম্বিকাপুর গ্রামে তার দাদীর কবরের পাশে দাফন করা হয়।
কবির মৃত্যুবার্ষিকীতে লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠন এর সদস্য, দায়িত্বশীল এবং শুভাকাঙ্ক্ষী সবার পক্ষ থেকে অজস্র ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।