বারী সিদ্দিকী ছিলেন বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান সংগীত শিল্পী, গীতিকার ও বংশী বাদক। তিনি মূলত গ্রামীণ লোকসংগীত ও আধ্যাত্মিক ধারার গান করে থাকেন। তিনি তার গাওয়া শুয়া চান পাখি, আমার গায়ে যত দুঃখ সয়, সাড়ে তিন হাত কবর, পুবালি বাতাসে, তুমি থাকো কারাগারে, রজনী, আমার গায়ে যত দুঃখ সয়, ওগো ভাবিজান নাউ বাওয়া, মানুষ ধরো মানুষ ভজো প্রভৃতি গানের জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত।
বারী সিদ্দিকী উনিশশো চুয়ান্ন সালের আজকের এই দিনটিতে অর্থাৎ পনেরোই নভেম্বর বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলায় এক সঙ্গীতজ্ঞ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পূর্ণ নাম আবদুল বারী সিদ্দিকী।
শৈশবে পরিবারের কাছে গান শেখায় হাতেখড়ি হয়। মাত্র বারো বছর বয়সেই নেত্রকোনার শিল্পী ওস্তাদ গোপাল দত্তের অধীনে তার আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ শুরু হয়। তিনি ওস্তাদ আমিনুর রহমান, দবির খান, পান্নালাল ঘোষ সহ অসংখ্য গুণীশিল্পীর সরাসরি সান্নিধ্য লাভ করেন।
ওস্তাদ আমিনুর রহমান একটি কনসার্টের সময় বারি সিদ্দিকীকে অবলোকন করেন এবং তাকে প্রশিক্ষণের প্রস্তাব দেন। পরবর্তী ছয় বছর ধরে তিনি ওস্তাদ আমিনুর রহমানের অধীনে প্রশিক্ষণ নেন। সত্তরের দশকে জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাথে যুক্ত হন। ওস্তাদ গোপাল দত্তের পরামর্শে ক্লাসিক্যাল মিউজিক এর উপর পড়াশোনা শুরু করেন।
পরবর্তী সময়ে বাঁশির প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন ও বাঁশির ওপর উচ্চাঙ্গসঙ্গীতে প্রশিক্ষণ নেন। নব্বইয়ের দশকে ভারতের পুনে গিয়ে পণ্ডিত ভিজি কার্নাডের কাছে তালিম নেন। দেশে ফিরে এসে লোকগীতির সাথে ক্লাসিক মিউজিকের সম্মিলনে গান গাওয়া শুরু করেন।
উনিশশো পঁচানব্বই খ্রিস্টাব্দে বারী সিদ্দিকী প্রখ্যাত সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ‘রঙের বাড়ই’ নামের একটা ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে জনসমক্ষে প্রথম সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
এরপর উনিশশো নিরানব্বই খ্রিস্টাব্দে হুমায়ূন আহমেদের রচনা ও পরিচালনায় নির্মিত শ্রাবণ মেঘের দিন চলচ্চিত্রে সাতটি গানে কণ্ঠ দেন। এর মধ্যে ‘শুয়া চান পাখি’ গানটির জন্য তিনি অতিদ্রুত ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন।
উনিশশো নিরানব্বই খ্রিস্টাব্দে জেনেভায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব বাঁশি সম্মেলনে ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে তিনি অংশগ্রহণ করেন।
বারী সিদ্দিকী বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ও গানের কথা লিখেছেন। তবে দুইহাজার তেরো খ্রিস্টাব্দে সিদ্দিকী ফেরারী অমিতের রচনা ও পরিচালনায় পাগলা ঘোড়া নাটকে প্রথমবারের মত অভিনয় করেন।
দীর্ঘদিন সংগীতের সঙ্গে জড়িত থাকায় সবার কাছে বারী সিদ্দিকী সংগীতশিল্পী হিসেবে পরিচিতি পান। ওই বছর হুমায়ূন আহমেদের ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ছবিটি মুক্তি পায়।
এই ছবিতে তিনি ছয়টি গান গেয়েছেন। তাঁর জনপ্রিয় হওয়া গানগুলোর মধ্যে রয়েছে শুয়াচান পাখি আমি ডাকিতাছি তুমি ঘুমাইছ নাকি, পুবালি বাতাসে, আমার গায়ে যত দুঃখ সয়, ওলো ভাবিজান নাউ বাওয়া, মানুষ ধরো মানুষ ভজো। এরপর তিনি চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করেছেন। তাঁর গাওয়া গান নিয়ে বেরিয়েছে অডিও অ্যালবাম।
দুইহাজার চৌদ্দ সালে তিনি প্রবাস প্রজন্ম জাপান সম্মাননা অর্জন করেন। এছাড়াও তিনি সিটিসেল চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডসও অর্জন করেন।
দুইহাজার সতেরো সালের চব্বিশে নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
আজ তার জন্মবার্ষিকীতে লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠনের সকল সদস্য দায়িত্বশীল এবং শুভাকাঙ্ক্ষীবৃন্দের পক্ষ থেকে জানাচ্ছি বিনম্র শ্রদ্ধা এবং অজস্র ভালোবাসা জানাচ্ছি।
তারিখঃ- ১৫/১১/২০২১ ইং।
