আজ খ্যাতনামা বাঙালি সাহিত্যিক বুদ্ধদেব বসুর মৃত্যুবার্ষিকী

বুদ্ধদেব বসু ছিলেন একজন খ্যাতনামা বাঙালি সাহিত্যিক। তিনি একাধারে কবি প্রাবন্ধিক নাট্যকার গল্পকার অনুবাদক সম্পাদক ও সমালোচক ছিলেন।

উনিশশো আট সালের ত্রিশ নভেম্বর তিনি কুমিল্লা জেলায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

বিংশ শতাব্দীর বিশ ও ত্রিশের দশকের নতুন কাব্যরীতির সূচনাকারী কবি হিসেবে তিনি সমাদৃত। অল্প বয়স থেকেই কবিতা রচনা করেছেন,তৈরি করেছেন নাটকের দল।

প্রগতি ও কল্লোল নামে দু’টি পত্রিকায় লেখার অভিজ্ঞতা সম্বল করে যে কয়েক জন তরুণ বাঙালি লেখক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবদ্দশাতেই রবীন্দ্রনাথের প্রভাবের বাইরে সরে দাঁড়ানোর দুঃসাহস করেছিলেন তিনি তাঁদের অন্যতম।

বাংলা ভাষার তুলনামূলক সাহিত্য সমালোচনার ক্ষীণস্রোতকে তিনি বিস্তৃত ও বেগবান করেন।

উনিশশো ছাপান্ন থেকে তেষট্টি সাল পর্যন্ত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বুদ্ধদেব বসু তুলনামূলক ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক নিযুক্ত হন।

তাঁর প্রথম জীবনের “সাড়া” এবং প্রাক প্রৌঢ় বয়সের “তিথিডোর” উপন্যাস দু’টি দু’ ধরনের বৈশিষ্ট্যে অনন্য।

অতি আধুনিক উপন্যাসের গীতিকাব্যধর্মী উপন্যাস রচনা করেছিলেন বুদ্ধদেব বসু। রচনার অজস্রতা এবং অভিনব লিখনভঙ্গীর দিক দিয়ে তিনি খ্যাতি লাভ করেছিলেন।

তাঁর উপন্যাসে যে ঘাত-প্রতিঘাত ও মানবিক প্রত্রিক্রিয়া বর্ণনা করেছেন, তাতে মনঃস্তত্ত্বের বিশ্লেষণের পরিবর্তে কাব্যোচ্ছাসের প্রাধান্য বিদ্যমান।

বুদ্ধদেব বসু’র দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ পৃথিবীর প্রতি ‘বন্দীর বন্দনা’র পরিপূরক গ্রন্থ। উভয় গ্রন্থেই শরীরী প্রত্যয়ে প্রেমের অভিব্যঞ্জনা প্রকাশ পেয়েছে। কিছুটা স্বাদের ব্যতিক্রম এসেছে ‘কঙ্কাবতী’ কাব্যগ্রন্থে।

সৃজনশীল সাহিত্যের সঙ্গে সমালোচনামূলক সাহিত্যে তাঁর সাফল্য সম পর্যায়ের। তিনি বাংলা গদ্যরীতিতে ইংরেজি বাক্যগঠনের ভঙ্গি সুপ্রসিদ্ধ করেছেন। পরিমার্জিত সঙ্গীতমগ্নতা ও পরিশীলিত স্বতঃস্ফূর্ততা বুদ্ধদেব বসু’র গদ্যের বৈশিষ্ট্য।

কবিতা, ছোটগল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, সমালোচনা, নাটক, কাব্যনাটক, অনুবাদ, সম্পাদনা, স্মৃতিকথা, ভ্রমণ, শিশুসাহিত্য ও অন্যান্য বিষয়ে বসু’র প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৫৬টি।

বাংলা সাহিত্যে আধুনিকতার পত্তনে যে কয়েক জনের নাম সর্বাগ্রে স্মরণীয় বুদ্ধদেব বসু তাঁদের অন্যতম। তাঁকে কল্লোল যুগ-এর অন্যতম প্রধান কাণ্ডারী হিসেবে গণ্য করা হয়। বাংলা কবিতায় আধুনিক চিন্তাচেতনা ও কাঠামো প্রবর্তনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।

ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র হিসেবে পশ্চিমা সাহিত্যের সঙ্গে তাঁর সম্যক পরিচয় ছিল। ফলে ইউরোপীয় এবং মার্কিন সাহিত্যের কলাকৌশল বাংলা সাহিত্যে প্রবর্তনে তিনি বিশেষ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন।

কলকাতায় তাঁর বাড়ির নাম রেখেছিলেন “কবিতা ভবন” যা হয়ে উঠেছিল আধুনিক বাংলা সাহিত্যের তীর্থস্থান।

ত্রিশের দশক থেকে শুরু করে পরবর্তী কয়েকটি দশক সাহিত্য পরিমণ্ডলে তাঁর প্রভাব ছিল অবিসংবাদিত। সাহিত্যের প্রায় সকল শাখায় তিনি কাজ করেছেন।

জীবনের শেষের দিকে তিনি নাট্যকাব্য রচনায় মনোনিবেশ করেছিলেন। তপস্বী ও তরঙ্গিনী, কলকাতার ইলেকট্রা ও সত্যসন্ধ, কালসন্ধ্যা, পুনর্মিলন, অনামী অঙ্গনা ও প্রথম পার্থ প্রভৃতি নাট্যকাব্য বাংলা সাহিত্যে একটি নতুন শিল্পরূপের জন্ম দিয়েছে।

উনিশশো সত্তর সালে তিনি “পদ্মভূষণ” উপাধি লাভ করেন। এছাড়াও উনিশশো চুয়াত্তর সালে “স্বাগত বিদায়” গ্রন্থের জন্য রবীন্দ্র পুরস্কার লাভ করেন।

আজ এই গুণী লেখকের মৃত্যুবার্ষিকী। উনিশশো চুয়াত্তর সালের আজকের এই দিনটিতে অর্থাৎ আঠারোই মার্চ তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠনের সকল সদস্য দায়িত্বশীল এবং শুভাকাঙ্ক্ষীবৃন্দের পক্ষ থেকে গুণী এই লেখকের মৃত্যুবার্ষিকীতে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা এবং অজস্র ভালোবাসা।

তারিখ:- ১৮/৩/২০২১ ইংরেজি

Facebook Comments